চেতনার বোধন

বোধন কথার অর্থ জাগিয়ে তোলা। কিন্তু জাগাবো কাকে? সমস্ত জগৎ চরাচর ঘুমিয়ে থাকলে, এমনকি সৃষ্টির লয়ের পরেও যিনি জেগে থাকেন তাঁকে? সমস্ত মন্ত্রের মূল যিনি, কোন মন্ত্র পাঠ করে তাঁকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব? বেদ,পুরাণ,উপনিষদ যার নাগাল পেতে অক্ষম, তাঁকে শাস্ত্রের বাঁধনে বাঁধা কি আদৌ সম্ভব? তাহলে কি সব বৃথা! এত আয়োজন,এত ভক্তি,এত চোখের জল সবই কি মিথ্যা! যুগ যুগান্তর ধরে ভক্তরা যে তার দর্শন পাবার জন্য কেঁদে কেঁদে আকুল হল, অন্ধ হল তাদের সবটুকুই কি মিথ্যা!
ঠাকুর বলতেন প্রতিমা প্রাণ পায় তিনটি কারণে, প্রথম শাস্ত্রসিদ্ধ বিগ্ৰহ,দ্বিতীয় পুজকের ঐকান্তিক ভক্তি ও তৃতীয় যজমানের পূর্ণ শরণাগতি। আসলে বোধন মানে মৃন্ময়ী প্রতিমার দেবীকে আহ্বান জানানো নয়। বোধন মানে নিজের অহং স্বর্গে বাস করে আমরা ভাবছি মাত্র কয়েকটি মন্ত্র পাঠ করে, কয়েকটি শ্লোক উচ্চারণ করে আমরা সেই অনন্ত শক্তির উৎসের উৎস পূর্ণব্রহ্মশক্তি-মহামায়া জগদম্বাকে জাগিয়ে তুলবো---- তার থেকে জেগে ওঠা, তাঁর আসল স্বরূপটি কে বুঝে তাঁর কাছেই নত হওয়া, তাঁর শরণাগত হওয়া। শরণাগতি, দৈন্যতা আর আর্ত ভাব থাকলেই তাঁর কৃপা হয়। আমরা তো মন্ত্র পাঠ করি, তা উপলব্ধি করি কজন? উপলব্ধিজাত প্রক্রিয়াটি চেতনার বোধন। “শরণাগতদীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে.....”
← Back to This Year’s Articles