RKMVM Logo

Ramakrishna Mission Vidyamandira

Puja Magazine

বোধন - বিনয় ভবন

অকাল বোধন

— পৃথ্বীরাজ মল্লিক, দ্বিতীয় বর্ষ, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ

puja
0:00 / 0:00
   

ইথ্থং যদা যদা বাধা দানোবোথ্থা ভবিষ্যতি।
তদা তদা বতির্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম।।

যখনই অশুভের জয়োল্লাস ধ্বনি, শুভের আর্তনাদকে ছাপিয়ে যাবে, তখনই সেই উল্লাসকে আকুতি ও আর্তনাদকে জয়ধ্বনিতে রূপান্তরিত করতে দেবী অবতীর্ণা হবেন। পুরাণাদিতে বারংবার দেবীর আবির্ভাবের কাহিনী আমরা জানতে পারি। সর্বপ্রথম সৃষ্টির আদিতে মধু ও কৈটভের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ব্রহ্মা আহ্বান করলেন মহাকালীর, জিজি বিষ্ণুনিদ্ররূপো মহারাত্রি যোগনিদ্রা দেবী। তাঁর কৃপাকটাক্ষে বিষ্ণু কর্তৃক মধুকৈটভ বধ হলো। দ্বিতীয়ত:, যখন অসুরেশ্বর স্বর্গলোক আক্রমণ করে দেবতাদের আসনচ্যুত করলেন, তখন ত্রিদেব আদি সমস্ত দেবতারা মহাদেবীর কৃপাকে আশ্রয় করে নিজ নিজ তেজ একত্রিত করে আহ্বান করলেন আদ্যশক্তি মহালক্ষ্মীকে। দেবী কল্পে-কল্পান্তরে মহিষাসুরকে বধ করে পুনরায় স্বর্গলোক শীতল করলেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দেবতা, ঋষিরা বহুপ্রকারে দেবীকে স্মরণ করছেন। আবার পুরাকালে ক্রেতাযুগে মর্যাদাপুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র সীতাউদ্ধার ও রাবণবধ হেতু প্রজাপতি কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বোধন করলেন মহাশক্তির। কিন্তু তা ছিল অসময়। কারণ তখন ছিল দক্ষিণায়ন, দেবতাদের নিদ্রার সময়। আসলে মর্ত্যলোকের একবর্ষ সময় দেবতাদের একদিনের সমান। কাজেই সম্পূর্ণ দিনকে দুটিভাগে ভাগ করলে একভাগ যেমন দিন ও অপরটা যেমন রাত্রি হয় সেরকমই একবছরকে দুইভাগে ভাগ করলে ছ-মাস দিন ও বাকি ছ-মাস রাত্রি হয়। সেইপ্রকার আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত সময়টা দেবতাদের রাত্রি, অর্থাৎ দক্ষিণায়ন। কিন্তু দেবতারা কি সত্যিই নিদ্রিত থাকেন? কারণ উপনিষদ বলছেন, প্রত্যগাত্মা চিরজাগ্রত — স্বপ্রকাশিত জাগরণই তাঁর স্বাভাবিক স্বরূপলক্ষণ বা ধর্ম। তাহলে প্রশ্ন, "বোধন কার?" বোধন আমাদের! জাগরণ আমাদের! অজ্ঞান আঁধারে চেতনার নিদ্রা। সেই নিদ্রা থেকে জাগরণ। দেবীকে উপলক্ষ্য করে জীবেরই ব্রহ্মশক্তির চৈতন্যলোকে জেগে ওঠার কাহিনী। এই প্রসঙ্গে, দ্বিজাগরিকা তাঁর গানে বলেছেন,

"দ্বিজ রাধিকায় বলে, উমা না জাগিলে
জগতে কে জাগাবে বলো...।"

সুতরাং, পূর্বাপর ঘটনাগুলি লক্ষ্য করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, যখনই দেবতাদের অস্তিত্ব রক্ষার উপর প্রকোপ এসেছে, তখনই মহাশক্তির আহ্বানের জন্য গগণে পবনে নিনাদিত হয়েছে মহাশঙ্খ। কারণ শুরুতেই বলা হয়েছে, তাঁর আবির্ভাবের হেতু। অর্থাৎ, যাঁর নিদ্রা নেই, সেই চৈতন্যময়ীকে আহ্বান করার কোনো সময়ই অসময় নয়, কোনো ঋতুই অকাল নয়!

← Back to This Year’s Articles