মা আমদের মানুষ কর :

একজন মা সর্বদা শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত তাঁর সন্তানের বিকাশ সাধনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। শৈশব থেকে বলি - মা তাঁর গর্ভে প্রায় ৯ মাস বহু কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে আমাদের জন্ম দেন। তারপর দেবী লক্ষীর মতো মা অন্নাদি যে সমস্ত দরকারি বস্তু সমস্ত কিছুর দ্বারা লালন - পালন করে বড় করে তুলেন। আর সেই মা ' ই বিদ্যার দেবী সরস্বতীস্বরুপা হয়ে সন্তানকে অক্ষরজ্ঞান দান করেন। মায়ের দেওয়া ওই জ্ঞানরূপ আলো পরবর্তী জীবনে অন্ধকাররূপ পথকে অতিক্রম করে যেতে সাহায্য করে । সর্বপ্রথম মা'ই চিনিয়ে দিয়েছিলেন মূর্তিরূপ ভগবান বা ঈশ্বরকে। যে কারণে আজও আমরা মায়ের জ্ঞানে এমন ভাবে অভ্যস্থ যে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো মন্দির বা মূর্তি দেখলেই প্রণাম করতে ইচ্ছে হয় । মা'ই তো শিখিয়ে দেন মূর্তিরুপ মায়ের প্রতি ভক্তি অর্পণ করা, মূর্তি রূপ ভগবানদের সেবা করা। বর্তমান সমাজে আমাদের মায়েরা যেভাবে আমাদের জাগিয়ে তুলেন, তা আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেখে থাকি। বাল্যকাল থেকে শুরু করি, বাল্যকালে শিশুদের মন অত্যন্ত চঞ্চল স্বভাবের হয়, তখন তারা যে ঠিক কি করে তারা নিজেরাও জানে না। বর্তমানের সমাজে যুবকেরা মোবাইল গেম এ আসক্ত । আসক্ত যুবক - যুবতীরা তাদের লক্ষ্য হারিয়ে ফেলে,চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের কমে যায়।ফলে মায়েরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন সন্তান যদি তমোগুণ বশত বিপথে চলে যায়, তখন দেবী দুর্গার মতো শাসন করে সন্তানদের মধ্যে থাকা কলুষিত মনকে অন্ধকার থেকে জাগিয়ে তুলে সন্তানকে সঠিক পথে ফিরিয়ে এনে নতুন জীবন দান করেন। মা ' ই পারেন অসুরকে মানুষরূপে পরিণত করতে। তাই আমাদের মা যে সর্বদা জীবন্তরূপে সমাজের মানুষদের জাগিয়ে তুলছেন তা আমরা ভাবতেও পারিনি বা ভাববার চেষ্টাও করিনি। শুধুমাত্র আমরা চিত্ররূপ বা মূর্তি রুপ মা কে নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু মূর্তি রুপ মায়ের মতো জন্মদাতা মা ' কেও সমানভাবে এই ধরাধামে পূজা করা উচিৎ। তাই তৈত্তিরীয়োপনিষদে বলা হয়েছে -" মাতৃদেবো ভব" অর্থাৎ মাতা দেবীরূপিণী। রামায়ণে বলা হয়েছে - "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী" অর্থাৎ জন্মদাত্রী জননী ও জন্মভুমি স্বর্গের থেকেও শ্রেষ্ঠ তাই আমাদের শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে সহস্র পিতার সমান হলেন একজন জননী তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করলেও পিতার তুলনায় মাতা ' ই অধিক পূজ্য - সহস্রং তু পিতৃন্ মাতৃ যঃ সমৈকাং তু পূজ্যতে। সর্বাঃ পৃথিবীং সমুৎপত্য পিতৃন্ মাতরমেব চ।।
← Back to This Year’s Articles